‘রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে’

‘রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে’

রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে, তাই রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভয়াবহ সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। এমনই মন্তব্য রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার সফররত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের।

তারা বলছেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফেরত যেতে হবে এবং তাদের নিরাপদ জীবন দিতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় কিছু সময় লাগতে পারে।’

রবিবার কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আসেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল। এরপর তারা এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

প্রতিনিধি দলের সদস্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি গুস্তাভ মেজা কোয়াদ্রা বলেন, ‘রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে কীভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহযোগিতা করা যায়, সেটি বুঝতে সফরে এসেছি। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে আমরা সহযোগিতা করে যাব।’

তবে মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে ফিরে যাওয়ার জন্য উপযোগী নয় বলেও মন্তব্য করেন কোয়াদ্রা।

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি কারেন পিয়ার্স বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আমরা নিরাপত্তা পরিষদে সমর্থন দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।’

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য নিরাপত্তা পরিষদে কুয়েতের স্থায়ী প্রতিনিধি মনুসর আল ওতাইবি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও দেশটির জনগণ রোহিঙ্গাদের যে মানবিক সহযোগিতা করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা এখান থেকে মিয়ানমারে যাব এবং সেখান থেকে নিউইয়র্কে ফিরে এ বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনা করবো। তবে আমরা এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না যে, আমরা দ্রুত কোনও ব্যবস্থা নেবো।’

তবে রোহিঙ্গা সমস্যার কোনও সহজ সমাধান নেই উল্লেখ করে প্রতিনিধিদলের সদস্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চীনের প্রতিনিধি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান দরকার। এ সমস্যার সমাধানে মানবিক দিকটি আগে বিবেচনা করতে হবে।’

এর আগে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে নিজেদের দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ তুলে ধরেন সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

সফররত ত্রিশ সদস্যের প্রতিনিধি দলটিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্সসহ জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি স্থায়ী ও ৫টি উপ-স্থায়ী প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এ ছাড়াও এ দলে আরও রয়েছেন নেদারল্যান্ডস, কুয়েত, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান, পেরু, পোল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, বার্বাডোজ, জর্ডান ও আইভরি কোস্টের প্রতিনিধিরা।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলটির রবিবার বিকালে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। তাদের সম্মানে হোটেল র‌্যাডিসনে রাতে নৈশভোজের আয়োজন করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিনিধি দলটির সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সফর শেষে একই ইস্যুতে ৩০ এপ্রিল দুই দিনের সফরে তারা মিয়ানমার যাবেন।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলটি কুয়েত থেকে একটি চার্টার বিমানে করে শনিবার বিকালে সরাসরি কক্সবাজারে আসে। এদিন রাতে রাতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের একটি বৈঠক হয়।

রবিবার সকালে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের তুমব্রু শূন্যরেখায় আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের দেখতে যান তারা। এরপর তারা কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান।  এসময় সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের দুটি প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়। এরপর তারা ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে রোহিঙ্গাদের কথা শোনেন। এসময় তাদের সঙ্গে কোনও সরকারি কর্মকর্তারা ছিলেন না।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment